শনিবার রাত ১ টায় নগরীর বানরগাতি আরামবাগ এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়িকে ঘিরে পুলিশের অবস্থান। পুলিশের অবস্থানকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে উত্তোজনার কোন কমতি ছিলনা। রাত যত ঘনিয়ে আসতে থাকে মানুষের মাঝে যেন উত্তোজনা বাড়তে থাকে। উপস্থিত জনতার মধ্যে কৌতুহলের মাত্রা আরও যেন বাড়তে থাকে।
এরমধ্যে রাত সোয়া ১ টার দিকে নির্মাণাধীন ওই বাড়িটিকে কেন্দ্র রণক্ষেত্র শুরু হয়। শুরু হয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের মধ্যে গুলি বিনিময়। ৩ ঘন্টার বন্ধুক যুদ্ধের শেষে এলাকার মানুষ জানতে পারে ওই বাড়িটি কেন্দ্র করে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবস্থান। পুলিশ ও নৌ বাহিনীর অভিযান শেষে নির্মাণাধীন ওই ভবণ থেকে গ্রেপ্তার হয় শান্তির নগরী খুলনার আতংক পলাশ শেখ এবং তার অন্যতম সহযোগী কালা লাভলুসহ ১০ জন। পুলিশের অভিযান শেষে একে একে বের হতে থাকে সন্ত্রাসী। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ টাকাসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র।
খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশ শেখ এবং তার সহযোগী কালা লাভলুসহ ১০ গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে রোববার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার। এ সময়ে তিনি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
এ সময়ে তিনি বলেন, খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে বানগাতি আরামবাগ এলাকার একটি নির্মানাধীন ভবনে খুলনার কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ রাত সোয়া ১ টার দিকে ওই বাড়ি এবং আশপাশের কয়েকটি বাড়ি ঘেরাও করে। অবস্থান টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ৮০-৯০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ৪৭ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। পরে পুলিশকে সাহায্যে করার জন্য নৌ বাহিনী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পিছু হাটতে বাধ্য হয়। পুলিশ ও নৌবাহিনী ওই নির্মানাধীন ভবনের চারিদিক ঘিরে ফেলে। তখন যৌথবাহিনীর সদস্যরা ওই বিল্ডিংয়ের ভেতর থেকে গোলাবারুদসহ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ ৫ জনকে আটক করে। পলাশের সাথে থাকা অন্যান্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ অস্ত্রসহ আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। অনুমান ৩ ঘন্টা ধরে পুলিশ ও সন্ত্রাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় চলতে থাকে। উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে ৭ জন পুলিশ সদস্য এবং ১ জন নৌবাহিনীর সদস্য আহত হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় এবং আহত সন্ত্রাসীদের চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযানের সময়ে পুলিশ তাদের কাছ থেকে ৩ টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১ টি শর্টগান, ২৩ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ২ টি চাইনিজ কুড়াল, ১ টি চা-পাতি, ১ টি হাসুয়, ২ টি চাকু, ৪ টি মোবাইল ফোন, ৭ টি মোটরসাইকেল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী পলাশ শেখের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি এবং ছিনতাইসহ মোট ১৪ টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ২ টি হত্যা, ৩ টি ডাকাতি, ১ টি অস্ত্র, ২ টি চাদাবাজি এবং অন্যান্য ৬ টি মামলা রয়েছে। পলাশ শেখের অন্যতম সহযোগী কালা লাভলুর বিরুদ্ধে ১ টি ডাকাতি, ১ টি অস্ত্র, ১ টি চাদাবাজি, ১ টি পুলিশকে আঘাত জনিত মামলাসহ ৬ টি মামলার অভিযোগ রয়েছে তার নামে। অপর সহযোগী নুরে আলম সিদ্দিকী ওরফে লিয়ন শরীফের বিরুদ্ধে ২ টি এবং ইমরান হোসেন ট্যাটু ওরফে ট্যাটু ইমরানের বিরুদ্ধে ১ টি ফজলে রাব্বি রাজনের বিরুদ্ধে ১ টি , রিপনের বিরুদ্ধে ১ টি ও ইমরানুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১ টি মামলার রয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৭ টি মোটরসাইকেলের মধ্যে ৫ টির নম্বর প্লেট এবং বাকীগুলো কোন নম্বর প্লেট নেই। ওই মোটরসাইকেলগুলোর মালিকানাসহ কাগজপত্র যাচাই বাচাই করা হচ্ছে।
খুলনার ১২ জন তালিকভুক্ত সন্ত্রাসীর মধ্যে ২ জন বাইরে আছে। বাকীরা কারাগারে আছে। ওই দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নগরীর শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আরও বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডমিন এন্ড ফিনান্স) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ, স্টাফ অফিসার অপারেশন টু কমখুল শহর খালিশপুর, খুলনা লে: কমান্ডার মো. সামিউর রহমান (এনডি), পিএসসি, বিএন, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মোহা: আহসান হাবীব, পিপিএম এবং সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম।
খুলনা গেজেট/এএজে